বাংলাদেশে মুক্তিযু*দ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনিরা সকল শিক্ষিত মানুষের উপর আক্র*মণ চালায়। পাকিস্তানরা যখন বুঝতে পারে তারা যু*দ্ধে জয়লাভ করতে পারবে না। এই কারণে তারা মিলিত ভাবে বাংলাদেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষিত লোকদের আক্র*মণ করার পরিকল্পনা করে। আল শামস, আল বদর, পাকিস্তানের দেশীয় রাজাকার এই সংগঠন রা মিলে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে এসে হাত পা বেঁধে মে*রে ফেলে দেয়।
ওই দিনে অনেক শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী লোক মৃ*ত্যুবরণ করেন। সাংবাদিক, প্রকৌশলী আইনজীবী, পল্লী চিকিৎসক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, এই সব লোকেদের নির্মমভাবে নির্যাতন করে হ*ত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা। এরপর বাংলাদেশে যু*দ্ধে চূড়ান্তভাবে বিজয় লাভ ঘোষণা হওয়ার পর বুদ্ধিজীবীদের স্ম*রণে নির্দিষ্ট একটি তারিখে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করেন।
আমাদের পরীক্ষা অথবা বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠানে এ প্রশ্নগুলো জানার দরকার পড়ে। তখন আপনারা অনলাইনের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে এই তথ্য খোঁজাখুঁজি করে থাকেন। অনেক সময় সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করেছি। আপনি আমাদের সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লেই বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে
প্রতি বছরের রাষ্ট্রীয় ভাবে বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। দিবস মূলত বুদ্ধিজীবীদের স্ম*রণীয় রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় ভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী সৃতিসৌধে হাজির হন।
সকল বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনয়ী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালন করা হয় এই তথ্য খুঁজে থাকেন। অর্থাৎ প্রতি বছর ১৪ই ডিসেম্বর জাতীয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা
অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে কাদেরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী বলা হয় এ তথ্য খুঁজে থাকে। বেশিরভাগ মানুষের এ সম্পর্কে ধারণা নেই। বাংলাদেশকে ধ্বংসের পথে ফেলার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা এ বুদ্ধিজীবীদের উপর হামলা চালায়। মূলত বাংলাদেশের সাংবাধিক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিল্পী, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, দার্শনিক এইসব লোকদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হতো। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে এদেরকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা
আপনারা অনেকেই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা জানতে চান। কিন্তু এখনো গণনা করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা সঠিক নির্বাচন করতে পারেনি। ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক বুদ্ধিজীবী রয়েছেন তারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার মধ্যে সুনামধন্য ঢাকা কলেজের শিক্ষক রাজশাহী কলেজের শিক্ষকসহ আরো অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের নাম উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : আনোয়ার পাশা, এ এন এম মুনীর চৌধুরী, ড. জিসি দেব, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আবদুল মুকতাদির, ড. এন এম ফয়জুল মাহী, ফজলুর রহমান খান, এবং আরো অন্যান্য ঢাকা কলেজের শিক্ষক রয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহী কলেজ এর শিক্ষক তারপর সাংবাদিকসহ, চিকিৎসক মানুষ অনেক মৃ*ত্যুবরণ করেছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কেন পালন করা হয়
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের বাহিনীরা তারা পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী লোকদেরকে হ*ত্যা করে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে ১৪ই ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিজীবী হ*ত্যা করেন। এরপর বাংলাদেশ যু*দ্ধে বিজয় লাভ করার পর বুদ্ধিজীবীদের স্ম*রণীয় করে রাখার জন্য এই দিনটিকে জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজ উদ্দিন আহমেদ ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী কতজন
বাংলাদেশ যুদ্ধে বিজয় লাভ করার পর ১৯৭২ সালে একটি আনুমানিক হিসাব করেছিলেন। বুদ্ধিজীবীদের স্ম*রণীয় করে রাখার জন্য এ নামের তালিকা বের করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রশাসনের বিভাগ ও জেলা ওয়ার্ডে আইনজীবী সঠিক বুদ্ধিজীবীদের তালিকা বের করতে পারেননি। সর্বমোট ১,১১১ জনের সংখ্যা উল্লেখ করেছিল কিন্তু সবার এই নাম উল্লেখ করতে পারেনি। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি ছিল।
- মোট শিক্ষাবিদ ছিল ৯৯১ জন।
- চিকিৎসক ৪৯ জন।
- আইনজীবী ৪২ জন।
- সাংবাদিক ১৩ জন।
- অন্যান্য ১৬ জন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে ১০টি বাক্য
বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হয়। আবার অনেক সময় বিভিন্ন পরীক্ষায় বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন জিনিস লেখার প্রয়োজন পড়ে। আপনারা অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে ১০ টি বাক্য খুঁজে থাকেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দের উল্লেখ করে ১০টি বাক্য তুলে ধরা হলো।
- শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মর*দেহ রাজধানীর মিরপুর এবং রায়েরবাজার এর বিভিন্ন ভূমিতে পাওয়া যায়।
- শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নি*র্মম হ*ত্যাকাণ্ডের কথা স্ম*রণ করে প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর জাতীয় শহীদ দিবস পালন করা হয়।
- পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও আল-বদর এবং আল-শামস তাদের বাংলাদেশী সহযোগীদের মাধ্যমে বাহিনী গঠন করে বুদ্ধিজীবীদের হ*ত্যা করা হয়।
- এই দিনে আমরা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্ম*রণ করছি জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাঁদের আমরা চিরতরে হারিয়েছি স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত।
- ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বরে দেশের সকল স্কুল কলেজের শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, লেখক ও সাংবাদিকসহ অন্যান্য মেধাবী ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে নির্যাতন ও হ*ত্যা করে ফেলা রাখা হয়েছিল।
- শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে যাঁদের আমরা চিরতরে হারিয়েছি – অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা,, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাহিত্যিক সেলিনা পারভীন সাংবাদিকগন,শিল্পিরা সহ আরো অনেককে।
- নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্ম*রণ করে রাখার জন্য ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। স্মৃতিসৌধটির স্থপতি হলেন মোস্তফা হালি কুদ্দুস।
- বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনকে স্বরনীয় করে রাখার জন্য “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস” ঘোষণা করেন।
- ১৯৭১ সালে ১০ই ডিসেম্বর থেকে ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রায় সকল প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীকে হ*ত্যা করা হয়। নিখোঁজ হন সেই সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্ম*রণে জাতীয় দিবস পালন করে।
- ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়। যা ১৯৯৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এবং এর নকশা করেন জামী-আল সাফী ও ফরিদউদ্দিন আহমেদ।
শেষ কথা
আপনারা যারা বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন অথবা ধারণা নেওয়ার জন্য শহীদ বুদ্ধি দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাচ্ছিলেন। ইতিমধ্যেই আপনি আমাদের এই পোস্টটি পড়ে শহীদ বুদ্ধি দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন। আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য শেয়ার করেছি। আশা করি আপনি আমাদের সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে জানতে পেরেছেন। ধন্যবাদ
আমি মো সাগর, ইনফো গুরু ওয়েবসাইট এর একজন লেখক। এই সাইটে আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা লেখি করে থাকি। আমি সর্বদা এই সাইটে তথ্যবহুল ও সঠিক ইনফো প্রদান করার চেষ্টা করি। আশা করি এই সাইটের লেখা গুলো আপনাদের ভাল লাগবে। ধন্যবাদ।